Skip to Content

শিবপুর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়

 স্থাপিত ঃ১৯১৮ খ্রি.

শিবপুর , নরসিংদী 



Contact us

এক নজরে শিবপুর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়

 

উত্তরে উপজেলা খাদ্য গুদাম, পশ্চিমে ঢাকা-মনোহরদী মহাসড়ক (কলেজ গেইট বাস স্ট্যান্ড), দক্ষিণে কলেজ গেইট-শিবপুর বাজার প্রধান সড়ক এবং পূর্বে শিবপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। শিবপুর সরকারি শহীদ আসাদ কলেজ সংলগ্ন বিদ্যালয়ের খেলার মাঠসহ বর্তমানে শিবপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মোট জমির পরিমাণ প্রায় ৪.২৫ একর।

 

শতবর্ষ পূর্বে গড়ে উঠা এ বিদ্যালয়ের অবকাঠামো সমসাময়িক কালে খুব একটা আড়ম্বরপূর্ণ ছিল না। মাটির দেয়াল আর টিনের চালা নিয়ে ১৯১৮ সালের ১ জানুয়ারি শিবপুর এইচ, ই.(হাই ইংলিশ) স্কুল নাম নিয়ে বর্তমান শিবপুর পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের পদযাত্রা শুরু হয়েছিল। লাকুশী গ্রামের সুরেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী ছিলেন শিবপুর হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক। প্রতিষ্ঠাকালীন স্কুল ঘরটি ছিল মাটির দেয়াল বেষ্টিত দক্ষিণ ও পশ্চিমমুখী টিনশেড ঘর। সে সময়ে স্কুলের কোন সীমানা প্রাচীর ছিল না। পূর্ব-পশ্চিম আর দক্ষিণ দিকে মেহেদী গাছের বেড়া ছিল। দক্ষিণ দিকে স্কুলের মাঝামাঝি বরাবর স্কুল গেইট ছিল। তৎসংলগ্ন একটি কাঠাল গাছের নিচে পানি পান করার জন্য একটি টিউবওয়েল ছিল। স্কুলের চারদিক সম্পূর্ণ ফাকা থাকায় স্কুল ঘরে প্রচুর আলো বাতাসের ব্যবস্থা ছিল। আর স্কুলের পশ্চিম উত্তর কোণে ছিল শৌচাগার। বিদ্যালয়ের পশ্চিম প্রান্তে কয়েকটি জাম গাছের নিচে মাটিতে পাটের চট বিছিয়ে অস্থায়ীভাবে নামাজের স্থান করা হয়েছিল। কেননা শিবপুর বাজার মসজিদ ব্যতীত আশে পাশে কোন মসজিদ ছিল না। এর ঠিক উত্তর পার্শ্বে ছিল স্কুল হোস্টেলের জন্য নির্ধারিত রান্না ও খাবার ঘর। তখন স্কুল থেকে থানা পর্যন্ত কোন বাড়ী-ঘর ছিল না। মাঠ আর মাঠ, মনে হত যেন বিরাট এক প্রান্তর।

 

সে সময়ে শিবপুর হাই স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল কো-এডুকেশনাল সিস্টেম। অর্থাৎ ছেলে-মেয়ে একসাথে পড়াশুনা করত। চক্রধা'র অনেক হিন্দু মেয়ে শিবপুর পাইলট স্কুলে পড়াশোনা করত। কিন্তু কোন মুসলমান মেয়েদের উপস্থিতি ছিল না। কারণ তৎকালীন মুসলিম সমাজ ব্যবস্থায় মেয়েদের বাড়ির বাইরে গিয়ে স্কুলে পড়াশুনা করা ছিল অসম্ভব ব্যাপার। ১৯২২ সালে নারায়ণগঞ্জ মহকুমায় শিবপুর হাই স্কুল থেকে মেট্রিক (এস.এস.সি) পরীক্ষায় প্রথম ব্যাচ পাঠানো হয়। এ বছর শিবপুর হাই স্কুল থেকে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছিল মোট ৯ জন। মৌলভী আবু তাহের ও বেনজির আহমেদ (কবি বেনজির আহমেদ) সহ ৬ জন প্রথম বিভাগে এবং ৩ জন দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। এভাবে প্রথম ব্যাচের গৌরবোজ্জ্বল ফলাফলের মধ্য দিয়ে শিবপুর হাই স্কুলের শুভ যাত্রা সূচিত হয়েছিল।

 

১৯১৮ সালের ০১ জানুয়ারি, জনাব সুরেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী'র দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে শিবপুর হাই স্কুলের যাত্রা শুরু হয়েছিল। সমসাময়িক কালে এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে শিবপুর থানা তথা নরসিংদী জেলায় ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনা করার পথ সুগম হয়েছিল। তখনকার দিনে দূর-দুরান্ত থেকে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে এসে পড়াশুনা করতে হত। কাল পরম্পরায় প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক শ্রী সুরেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী অন্যত্র চলে গেলে (জুলাই-১৯১৯) সাবেক কুমিল্লা জেলার (বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়ীয়া) বাঞ্চারামপুর থানার শ্রী অনুকূল চন্দ্র ধর শিবপুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন অতি ধৈর্যশীল একজন লোক। তাঁর কোন রাগ ছিল না। ছাত্রদের হই হুল্লোর আর দুষ্টুমিতেও ডেকে নিয়ে শুধু বলতেন- "কেবল খালি দুষ্টুমি"। শ্রী অনুকুল চন্দ্র ধর সাহেবের দায়িত্ব গ্রহণের দীর্ঘকাল পর ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগজনিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে শ্রী অনুকুল ধর ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে ভারত চলে গেলে ১৯৪৭ সালে শিবপুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মৌলভী আবু তাহের (বিএবিটি)। শৌষ-বীর্য আর নবজাগরণের প্রতীকরূপে তিনি বিদ্যালয়ের হাল ধরেন। ১৯৫৪ সালে বন্যার পানিতে শিবপুর হাই স্কুল একাকার। ক্রমাগত বন্যার পানিতে স্কুল ঘরের মাটির দেয়াল টইটুম্বর। পানির স্পর্শে মাটির দেয়াল খুব বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি। কোনো এক গভীর রাতে বিকট আওয়াজ তুলে স্কুল ঘরের মাটির দেয়াল ভেঙ্গে পড়ে যা পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকেও ভয়ঙ্করভাবে শোনা গিয়েছিল। সে সময় বিদ্যালয়ের দক্ষিণ ও পশ্চিম অংশে কোনো দেয়াল ছিল না। শুধু ছিল ঘন ঘন করে লাগানো জিকা গাছ (কাফিলা গাছ)। বন্যার পানিতে মাটির দেয়াল ভেঙ্গে গেলে স্কুল ভবন নতুন করে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তখন মাটির দেয়ালের জায়গায় খুলি বাশের বেড়া তৈরী হলো। ফলে ১৯৫৮ সালের দিকে মুলি বাশের বেড়া ঘেরা ইংরেজি 'এল' আকৃতির টিনের ঘরই ছিল শিবপুর হাই স্কুলের অবকাঠামো। কালের বিবর্তনে মাটির দেয়াল ঘেরা টিনের চালাবিশিষ্ট স্কুল ভবনটি ইংরেজি 'এল' আকৃতির রূপ নেয়। উত্তর-দক্ষিণে লম্বা ইংরেজি 'এল' আকারের একদিকের অংশ ছিল কোঠা ঘর।আর অন্য দিকে মুলির বেড়ার। অর্থাৎ পূর্ব অংশে অবস্থিত পশ্চিমমুনী ভবনটি চি দ্বিমাতিজার বা সিরা টিনের জন্য বংশের-পশ্চিম লখ্য দক্ষিণমুর্শী ভবনটি পালায় চোর। চালাবিশিষ্ট কোঠা ঘর। আর উত্তর অংশে অবস্থিত থেকে দশম শ্রেণির ক্লাশগুল্যে একটি ক্রমসজ্জায় বিন্যাস্ত ছিল যা ক্রমান্বয়ে যেন ধীরে ধীরে রাস্তার সাথে মিশে যাচ্ছিল।

 

এই 'এল' এর কোণা দিয়ে ভাঙ্গা ছিল যেখান দিয়ে উত্তরের সৈয়দের গাঁও-এর ছাত্ররা মেঠো পথে এসে ভাঙ্গা জংশ দিয়ে সরাসরি স্কুল চত্বরে ঢুকে যেত। ১৯৬২ সালে তদানিন্তন আইয়ুব সরয়াকরার কাজ শুর বরাদ্দকৃত ৬০,০০০/-(ষাট হাজার টআকা) দিয়ে সরাসরি মূল চত্বরে ঢুকে য়েক স্কুল ভবনের পশ্চিম অংশের দু'টি কল্পের উদ্দীপনা ও কৌতুহলেরছিল। শিবপুর হাই স্কুলে ভরে টাকা উঠবে এই সংবাদ ছাত্র-শিক্ষদের মাঝে দারুন নাকর্মীখনা ভিকৌতুহলের শিবার হাই স্কুলে ইটের দলান উঠবে ও পুরাতন সাব-রেজেস্ট্রী অফিসের ঘাটে নৌকা এসে ভিড়ত। আর সেখান থেকে শিবপুর হাই স্কুল পর্যন্ত ছাত্ররা সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে শিক্ষকদের সহযোগিত ও দিক নির্দেশনার মধ্য দিয়ে অত্যন্ত আগ্রহ ভরে হাত বদল করে ইট নিয়ে আসত। এভাবে ছাত্র-শিক্ষকদের সম্মিলিত প্রয়াসের মধ্য দিয়ে পাকা দালান নিয়ে শিবপুর হাই স্কুলের অগ্রযাত্রার ত্বরান্বিত হয়েছিল।

 

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শিবপুর হাই স্কুলে কো-এডুকেশনাল সিস্টেম (সহশিক্ষা) চালু ছিল। মূলত আঃ হাই সরকারের বাবা (শিবপুর হাই স্কুলের তৎকালীন হেড মৌলভী) মৌলভী আব্দুল আজিজ সাহেব এবং মৌলভী আবু তাহের মেয়েখয়ের আলাদা বিদ্যালয়ে পড়ানোর প্রবণতা থেকে ১৯৬৪ সালে শিবপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়, তখন থেকে অত্র বিদ্যালয়ে ছাত্রী ভর্তি করা হতো না। যেহেতু বালিকাদের জন্য আলাদা বিদ্যালয়ের ব্যবস্থা হয়ে গেল। সুতরাং ১৯৬৪ সাল থেকে শিবপুর হাই স্কুলে কেবল বালক বিদ্যালয় হিসেবে পরিচিতি পেতে থাকে। একই বছর ওনাদেরই অনুরোধে মোসলেহ উদ্দিন খান সাহেব বিদ্যালয়ে ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার টাকা) অনুদান দেন শিক্ষক মিলনায়তন নির্মাণের জন্য।

 

১৯৭১ সাল ছিল শিবপুর হাই স্কুলের জন্য গৌরবের বছর। কেননা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এই স্কুলের ছাত্রদের সাহসী অংশগ্রহণ এবং সার্বিক অবদান নিঃসন্দেহে অনস্বীকার্য। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এই স্কুলের ছাত্র জনাব আবুল মান্নান ভূইয়ার নেতৃত্বে শিবপুর হাই স্কুলে ২৭শে মার্চ, নরসিংদী জেলার প্রথম মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপিত হয়েছিল। সে সময়ে বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত মরহুম মজনু মৃধা ও তৎকালীন আনসার কমান্ডার জনাব সানাউল্লাহ এলাকার যুবক ও ছাত্রদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে শিবপুর হাই স্কুল মাঠে ট্রেনিং দেয়ার কাজ শুরু করে- ছিলেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই পাক বাহিনী শিবপুরে চলে আসলে ট্রেনিং ক্যাম্পটি বিলসরন গ্রামের মহি'র টেক-এ স্থানান্তর করা হয়েছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধে এ বিদ্যালয়ের ছাত্র ফজলু, আমজাদ, মানিক, জলিল, সাদেক এবং মিয়ার উদ্দিনসহ নাম না জানা অনেকে শহীদ হন। এমন কি যুদ্ধে বিজয় লাভের পর বাংলাদেশ সরকার ১৯৭২ সালের ১ জানুয়ারির মধ্যে অস্ত্র জমা দানের নির্দেশ দিলে এ বিদ্যালয় মাঠেই সমস্ত অস্ত্র জমা করা হয়েছিল। ১৯৭২ সালে দত্তেরগাও মধ্যপাড়ার অতুল চন্দ্র কর শিবপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কে প্রায় ২০ হাজার টাকার জমি দান করেন। মৃত্যুর পূর্বে অতুল চন্দ্র কর তার সকল সম্পত্তি মৌলভী আবু তাহের সাহেবকে দিয়ে যান যেখানে দত্তেরগাও মৌজার প্রায় ২০ কানী সম্পত্তি ছিল। মৌলভী আবু তাহের সাহেব অতুল কর-এর নামে শিবপুর হাই স্কুলে এই জমি দান করে দেন। পরবর্তীতে মৌলভী সাহেব এই সম্পত্তি বিভিন্ন লোকের নিকট বিক্রি করে স্কুল ভবন নির্মাণ কাজে ব্যায় করেন। এখানে উলেখ্য যে, অতুল চন্দ্র কর ১৯৩৫ থেকে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শিবপুর ও রায়পুরা থানার ঋণ সালিশী বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন।

 

জনাব মৌলভী আবু তাহের সাহেব দীর্ঘ ২৫ বছর অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৭ তারিখ অবসর গ্রহণ করেন। সৎ, নির্ভীক ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক বলিষ্ঠ প্রতিমূর্তি রূপে তিনি জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের নিকট শ্রদ্ধাভাজন ও অনুসরণীয় ব্যক্তি ছিলেন। অন্যায়ের ও ন্যায়ের পক্ষে তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। ১৯৭২ সালে জনাব মৌলভী আবু তাহের সাহেব অবসর গ্রহণ করলে একই বছর জনাব ফজলুর রব শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ সময়ে অবকাঠাকামোগত দিক দিয়ে আমূল পরিবর্তন ও উন্নয়ন সাধিত হয়েছিল। পূর্বের ইংরেজি 'এল' আকৃতির ভবনের জায়গায় নতুন করে ইংরেজি 'ই' আকৃতির ভবনের ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছিল। পূর্ব, উত্তর এবং পশ্চিম অংশে স্থাপিত ভবনগুলো যথাক্রমে পশ্চিম, দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে মুখ করা ছিল। আর উত্তর অংশে স্থাপিত পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা দক্ষিণ মুখি ভবনের ঠিক মাঝ বরাবর ছিল প্রধান শিক্ষকের কক্ষ (বর্তমান অবস্থানে)। এই প্রধান শিক্ষকের কক্ষ বরাবর বারান্দার অংশ মূল বারান্দা থেকে বর্ধিত করার ফলে বিদ্যালয়টি একটি সুন্দর ইংরেজি বর্ণ  ‘ই’ আকৃতি ধারন করেছিল। তাছাড়া বিদ্যালয়ের দক্ষিণ সারিতে নারিকেল গাছ বেষ্ঠিত ও সুবিশাল মাঠ সমৃদ্ধ ত্রিমুখী দালান ভবনে বিদ্যালয়টিকে খুব চমৎকার লাগত। ইংরেজি 'ই' আকৃতির পাকা দালান ঘরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন শিবপুর থানাধীন চান্দের টেকা কামেরাশনারায়ে। শামসুল হক মোল্লা। মৌলভী আবু তাহের সাহেবের অনুরোধক্রমে মোল্লা সাহেব এই জ্বলেত হংরেজি খান ঘবের ভিত্তির স্থাপন করেন (উল্লেখ্যঃ ১৯৫৯ সালে তিনি কুমিল্লা জেলার মুলেফ রিলেন)। নবগঠিত ইংরেজি বর্ণ 'ই' আকৃতি বিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল। পুরমাতে পুকুর ছিল। আর বিদ্যালয়ের মূল ভবনের পশ্চিম পাশে মসজিদ ছিল। তখনও কোনো সীমানা প্রাচীর ছিল না ।

 

১৯৮০ সালে সারা দেশে পাইলট প্রকল্প চালু হলে শিবপুর হাই স্কুল পাইলট প্রকল্পের আওতায় চলে আসে। ফলে বহু প্রাচীন "শিবপুর হাই স্কুল" এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় "শিবপুর পাইলট হাই স্কুল"। পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে ২ লক্ষ টাকা সরকারি অনুমোদনের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের পূর্ব অংশে স্থাপিত উত্তর-দক্ষিণে পথ্য ভবে দোতলার কাজ সম্পন্ন করেন। দীর্ঘ ১৩ বছর কৃতিত্বের সঙ্গে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর ১ মার্চ, ১৯৮৫ সালে জনাব ফজলুর রব অবসর গ্রহণ করেন।

 

জনাব ফজলুর রব অবসর গ্রহণ করার পর একই বছর জনাব নাদিরুজ্জামান শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দীর্ঘ ১০ বছর প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করার পর ৫ এপ্রিল, ১৯৯৫ সালে জনাব

 

নাদিরুজ্জামান অবসর গ্রহণ করেন। জনাব নাদিরুজ্জামান অবসর গ্রহণ করলে একই বছর জনাব আবুল হাসিম শিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অল্পকাল প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর ১৫ মার্চ, ১৯৯৬ সালে জনাব আবুল হাসিম অবসর গ্রহণ করেন পরবর্তীতে জনাব আবুল হাসিম অবসর গ্রহণ করলে ১১৯৯৬ সালে জনাব সহিদ উল্লাহ ভূইয়া শিবপুর পাইলট হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। জনাব সহিদ উল্লাহ ভূইয়া স্যারের সময়ে ১৯৯৮ সালে সরকারি অর্থায়নে এল.জি.ই.ডি এর আওতায় বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর তৈরি করা হয় যা এখনো বর্তমান।

 

১৯৯৮ সালের গোড়ার দিকে পূর্ব পাশের পুকুর ভরাট করে কারিগরি শাখার নতুন ভবন তৈরি করা হয়। ১৯৯৯ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি শিবপুর পাইলট হাই স্কুলের পূর্ব-উত্তর কোণে বর্তমান স্থানে স্থানান্তর করা হয়। ২৫ এপ্রিল, ২০০১ সালে দীর্ঘ। ৫ বছর কৃতিত্বের সঙ্গে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন করার। পর জনাব সহিদ উল্লাহ ভূঁইয়া অবসর গ্রহণ করেন।

 

জনাব সহিদ উল্লাহ ভূঁইয়া অবসর গ্রহণ করলে ২০০১ সালের ২৬ শে মোঃ ফজলুর রহমান (ফটিক মাস্টার) ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ইংরেজি 'ই' আকৃতির বিদ্যালয়ের মূল ভবনের পশ্চিম অংশে অবস্থিত উত্তর-দক্ষিণে লম্বা পূর্বমুখী ভবনটুকু ভেঙ্গে এবং যে মসজিদটি ছিল তা ভেঙ্গে বিদ্যালয়ের পশ্চিম-উত্তর কোণে ২০০৩-২০০৪ অর্থ বছরে শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের অর্থানুকূলে পূর্বমুখী একতলা ভবন নির্মাণ কর হয়। অল্প সময় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব পালন করার পর ২০০৩ সালের ৩০ শে আগষ্ট জনাব মোঃ ফজলুর রহমান (ফটিক মাস্টার) অবসর গ্রহণ করেন।

 

জনাব ফজলুর রহমান অবসর গ্রহণকালে ০১ সেপ্টেম্বর, ২০০৩ সালে জনাব তোছাদ্দেক হোসেন খান (মানিক স্যার) শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং অল্প সময় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এসেবে দায়িত্ব পালন করার পর ২০০৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি অবসর গ্রহণ করেন।

 

জনাব তোছাদ্দেক হোসেন খান অবসর গ্রহণ করলে ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০০৪ সালে জনাব তোফাজ্জল হোসেন (তোফাজ্জল মাস্টার) শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সালে নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জনাব জামাল আহমেদ চৌধুরী'র ১০ লক্ষ টাকা অনুদানে বিদ্যালয়ের পশ্চিম কোণে উত্তর-দক্ষিণে লম্বা পূর্বমুখী একটি দোতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। নবগঠিত ভবনের নিচতলার শেষ দক্ষিণের কক্ষটি নামাজের কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তার ঠিক দক্ষিণে সীমানা প্রাচীর ঘেষে রয়েছে পানি পান করার টিউবয়েল। তাছাড়া প্রধান শিক্ষকের কক্ষ বরাবর বিদ্যালয়ের দক্ষিণে সীমানা প্রাচীর ঘেষে ছাত্রীদের জন্য পানি পান করার টিউবওয়েল রয়েছে। ২০০৭ সালে বিদ্যালয়টি মডেল প্রকল্পের আওতাভূক্ত হলে পূর্বের “শিবপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়” বর্তমানে "শিবপুর পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়” নামে আত্মপ্রকাশ ঘটে। প্রায় ৫ বছর প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ সালে জনাব তোফাজ্জল হোসেন অবসর গ্রহণ ক হিসেবে জনাব তোফাজ্জল হোসেন অবসর গ্রহণ করলে ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্‌ভার গ্রহন করেন জনাব মোরশিদুজ্জামান খান। মাত্র ৬ মাস ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর একই বছর জুন মাসের ২৯ তারিখে জনাব মোরশিদুজ্জামান খান অবসর গ্রহণ করেন।

 

জনাব মোরশিদুজ্জামান খান অবসর গ্রহণ করার পর ২০০৯ সালের ৩০ জুন জনাব মহব্বত হোসেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ২০১১ সালে মডেল স্কীমের শর্ত হিসেবে পুনরায় কো-এডুকেশনাল সিস্টেম চালু করা হয়। ৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ সালে জনাব মহব্বত হোসেন স্বপদে ফিরে যান। পরবর্তীতে জনাব মোঃ ইব্রাহীম সরকার, জনাব সালাহ উদ্দিন, জনাব মোঃ আমির হোসেন (পূর্ণ মেয়াদে), জনাব মোঃ বিল্লাল হোসাইন ধারাবাহিকভাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে বিভিন্ন মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

 

২০১৪ সালে মাধ্যামিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের অধীনে উত্তর-পশ্চিম অংশে পূর্ব-পশ্চিম লম্বা দক্ষিণমুখী সুরম্য তিনতলা ভবন নির্মিত হয়। নতুন ভবনের প্রত্যেকটি কক্ষই মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের উপযোগী করে তৈরি। প্রতিটি কক্ষে প্রজেক্টর, সাউন্ড সিস্টেম, ল্যাপটপ মাইক্রোফোন এবং স্পীকার রয়েছে। বিদ্যালয়টিতে মোট ১৮টি ল্যাপটপ ও ২৪টি ডেস্কটপসহ একটি আধুনিক মানসম্মত কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে।

 

শিবপুর পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়-এর বর্তমান প্রধান শিক্ষক জনাব নূরউদ্দিন মোঃ আলমগীর অত্যন্ত দক্ষ ও অভিক্ষ একজন শিক্ষক। ৩০ আগষ্ট, ২০১৫ সালে তিনি প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। শিক্ষকতা জীবনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তিনি তাঁর সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। তারই স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৪ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি তিনি জেলা পর্যায়ে শেষ্ঠ প্রধান শিক্ষকের মর্যাদা লাভ এবং জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ- ২০১৬-এ শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন। এছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান বৃদ্ধি ও ফলাফলে সাফল্য অর্জনের ল্যাব রয়েছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও খেলাধুলায় বিদ্যালয়টি প্রতিযোগিতার শীর্ষে অবস্থান করছে। বিগত বছরগুলোতে মেধা তালিকায় প্রশংসনীয় স্থানে অবস্থান করছে। একদিকে নারিকেল গাছের সারি অপর দিকে বিস্তৃত সবুজ মাঠ সব মিলে প্রাকৃতিক শ্যামল ছায়ায় অবস্থিত শিবপুর পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে মোট ৩৬ জন দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলী, প্রায় ১৫০০ ছাত্র-ছাত্রীকে নিরলস পাঠদানের মাধ্যমে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়ের সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখেছেন।

 

উল্লেখ্য যে, উদ্বোধনী স্টোনের প্রেক্ষিতে বলা যায় বিদ্যালয়ের নান্দনিক ভবনগুলো হলো, চার তলাবিশিষ্ট একাডেমিক ভবন, তিনতলা বিশিষ্ট মডেল ভবন, চারতলা ভিতবিশিষ্ট হল রুম নতুন স্থাপন করা হয়। বর্তমানে সরকারের নতুন প্রকল্প স্কুল অব ফিউচার চালু করা হয় এবং শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়।



বই উৎসব ২০২৪